Header Ads

আমি এই প্রথম মাটি ও মানুষের প্রেমে পড়েছি...




আমি এই প্রথম মাটি ও মানুষের প্রেমে পড়েছি।
মাটি দিয়েই তো মানুষ তৈরী। তাই মাটির সাথে মানুষের একটি আকর্ষণ আছে। এই প্রথম একসাথে মাটি ও মানুষের প্রেমে পড়েছি।

প্রাকৃতিক সবুজ ও শ্যামলে সুশোভিত
কেরাণীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নে ঘুরতে গিয়েছিলাম। সিএনজি থেকে স্টেশনের বাজারে নামতেই, ওখানের অপেক্ষারত ভাইটি এগিয়ে এলেন। কুশল বিনিময় শেষে সোজা হোটেলে ঢুকালেন। ডান হাতের কাজটা সারার জন্য।

পারোটা ভাজি আর ডিমের নাস্তা শেষ হতেই দইয়ের আয়োজন এলো টেবিলে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আমি দই মুখে দিয়ে এমন অমৃতের স্বাদ পেলাম যা আমি সেই ছোট্টবেলায় পেতাম।

গ্রামের বাড়িতে দুধ দিয়ে দই পাতার মত সেই স্বাদ। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম, এতো সুন্দর স্বাদের দই কিভাবে হয়? ও বললো, " এখানকার দুধটা নির্ভেজাল, অসংখ্য গরুর খামার আছে এখানে। সেই খামারে সবুজ ঘাসের পর্যাপ্ত খাবারের কারণে গরুর দুধটা ভালো পাওয়া যায়। তাই দইটা এখানে ভালো হয়। "

বাহ, এতো দেখছি ছোটবেলার গল্প!
যাইহোক, প্রাণে স্পন্দন লেগে গেলো হোটেলের খাবার থেকেই।

অতপর বের হলাম গ্রামটা ঘুরে দেখার জন্য। পায়ে হেঁটে নন্দিত হৃদয়ে চলছি বহুপথ....

কলাতিয়া নামটি সার্থক। এখানে অনেক কলা গাছের বাগান দেখলাম। যেখানে ইয়া বড় বড় কলার ছড়া ঝুলছে। শুধু কলা নয়, খুব ভালোলাগলো রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন ফলের সারি সারি গাছের লাইন দেখে। আম গাছের ফুলে-বউলে মৌ মৌ করছে।

রাস্তার দু'ধারের সুদৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ পড়লো একটু দূরের জমিতে বিভিন্ন সবুজ সবজির বাগান দেখে। সবজির প্রতি দুর্বলতা আমার আজন্ম বিদ্যমান। আমি দৌড়ে গিয়ে হাজির হলাম টমেটো বাগানে। চাষি ভাইকে বললাম ' ভাই ১ কেজি টমেটো দেয়া যাবে? আমরা এখানে খাবো!'

চাষি ভাই জবাব দিলেন, " যত পারেন খান, ১ কেজির দাম দিলেই হইবো।" এ কথা শুনে দিল টা ভরে গেলো। বন্ধুরা মিলে বেশকিছু টমেটো খেলাম। বাগানে ঢুকে পাকা পাকা টমেটো ছিড়ে খেতে লাগলাম। এ যেন মুহূর্তেই সেই ছোট্টবেলায় ফিরে গেলাম।

আমি সেই পিচ্চিকালে টমেটো বাগানের এক পাশ থেকে শুরু করে পেট ভরে টমেটো খেতে খেতে অন্য পাশ দিয়ে বের হতাম। টমেটোতে পেট টইটম্বুর হত! 

নির্মল স্মৃতিচারণ।
যাইহোক, এবারে টমেটো বাগান থেকে বেড়িয়ে ফেরার পথের ঘটনায় কলাতিয়া মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলাম।
ফিরছি...। হঠাৎ দেখি একটু দূরে এক মুরুব্বি আঁকশি দিয়ে আতাফল পাড়তে চেষ্টা করছেন। কিন্তু হাতের নাগালে পাচ্ছেন না। আমি দৌড়ে গিয়ে বললাম, " আংকেল! আমাকে দিন, আমি পেড়ে দেই। তিনি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে আঁকশি দিয়ে দিলেন।
আমি দূরের শাখা প্রশাখার ডালপালা টেনে আতাফল ছিড়ে আংকেলকে দিতে গেলাম। কিন্তু তিনি বললেন, 'না বাবা, এটা তোমরা খাও।'
আমি বললাম, ' আংকেল আপনি মুরুব্বি মানুষ। এখন আপনার বেশি বেশি ফলমূল খাওয়া দরকার। আপনি এটা বাসায় রেখে দিন। পাকলে খাবেন।
তিনি ফলটি নিলেন আর বললেন, বাবারা আপনারা এখানে একটু খাড়ান, আমি আইতাছি।
কিছুক্ষণ পর আংকেল আরেকটি বড় আতাফল নিয়ে এসে আমার হাতে দিয়ে বললেন, 'আপনারা সবাই মিলে এটা খান। পুরো পেকেছে। খুব ভালোলাগবে। '
তার অনুরোধে অবশেষে নিতেই হলো। খাওয়াটা বড় কথা নয়, ঐ আংকেলের আন্তরিকতা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে, মাটি ও মানুষের অদ্ভুত সুন্দর মিল দেখে। আর তাই এই ঊর্বর খাঁটি মাটিতে পাটি পেতে ঘুমিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। এমন মাটি আর মানুষ পেলে জীবনে প্রাণ সঞ্চারিত হয়। মন মায়ায় ভরে যায়।

যখন ফিরে আসছি, তখন শুধু ভাবছি, আবার কবে যাবো ফিরে, কলাতিয়ার কলেবরে।
#কলাতিয়ার মাটি ও মানুষের প্রেম / সাজিদ আল সাহাফ

ফেসবুকে এই পোস্টটিতে অসংখ্য বন্ধুদের মন্তব্য দেখতে এইখানে প্রবেশ করুন

No comments

Powered by Blogger.