Header Ads

পিত্তপাথর – কেনো হয়, কী করণীয়, প্রতিরোধ ব্যবস্থা কী? আপনার যা জানা দরকারঃ- নেচারাল চিকিৎসা ও অপারেশন




পিত্তথলিতে পাথর খুব সহজেই আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। উন্নত বিশ্বে ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ২০ জনেরই পিত্তপাথর হয়। সবার আবার পাথর হলেই ব্যথা-বেদনা হয় না। ৮০ শতাংশ পাথরের রোগীর কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এরা চুপচাপ থাকে; এদের লক্ষণবিহীন নীরব পাথর বলা হয়।

.
            পিত্তথলির অবস্থান ও এর কাজ কী?
         --------------------------------------------------------
পিত্তথলি ওপর-পেটের ডান দিকে লিভারের নিচে থাকে। পিত্তথলি লিভার থেকে তৈরি পিত্ত জমা রাখে এবং চর্বিজাতীয় খাবার খেলে চর্বি হজমের জন্য ক্ষুদ্রান্ত্রে পাঠিয়ে দেয়।

.
      পিত্তথলি না থাকলে চর্বি কীভাবে হজম হবে?
    ------------------------------------------------------------------
পিত্তথলি শুধু পিত্তরসকে কিছু সময়ের জন্য ধরে রাখে। পিত্তথলি পিত্তরস তৈরি করে না। পিত্তরস তৈরি হয় লিভারে। পিত্তথলি না থাকলে মানুষের কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ এ ক্ষেত্রে লিভার থেকে পিত্তরস সরাসরি পিত্তনালির মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে।



.
           পিত্তথলিতে কীভাবে পাথর হয়?
         ------------------------------------------------
পিত্ত একটি তরল পদার্থ, যার মধ্যে কিছু কঠিন পদার্থ থাকে। তরলের পরিমাণ কমে গেলে অথবা কঠিন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে পাথর হয়। অন্য কোনো অসুখ থাকলে পিত্তে পাথর হতে পারে। যেমন-সিকল সেল অ্যানিমিয়া এবং অপারেশনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রের কিছু অংশ কেটে ফেলা হলে। কোনো কারণে পিত্তথলি যদি তার সংকোচন এবং প্রসারণের ক্ষমতা হারায়, তাহলে পাথর হতে পারে।

.
         পিত্তথলিতে কাদের পাথর বেশি হতে পারে?
     -------------------------------------------------------------------
          * যারা বেশি চর্বিজাতীয় খাবার খায়।
          * ডায়াবেটিসের রোগী।
          * লিভারের অসুখের রোগী।
          * বারবার গর্ভবতী হলে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

.
               কী লক্ষণ হবে পাথর হলে?
           -------------------------------------------
          * ৮০ শতাংশ রোগীর কোনো লক্ষণ থাকে না।
          * চর্বিজাতীয় খাবার খেলে খারাপ লাগা।
          * পেটে ব্যথা।
          * জন্ডিস (অন্য অনেক কারণেও জন্ডিস হয়)।



.
         পাথর থাকলে কী অসুবিধা হতে পারে?
       ----------------------------------------------------------
            * পাথর সারা জীবনে কোনো কষ্ট না দিতে পারে।
            * পিত্তথলির প্রদাহ হয়ে পেটে ব্যথা হতে পারে।
            * পিত্তনালিতে সরে গিয়ে জন্ডিস বা প্যানক্রিয়াটাইটিস হতে পারে।
            * বহুদিন থাকার ফলে পিত্তথলির ক্যান্সার হতে পারে।

.
                 কীভাবে চিকিৎসা করাবেন?
              --------------------------------------------
            * পাথর ভেঙে ফেলাঃ এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা এখনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কারণ পাথর ভেঙে ফেললেও কিছু থেকে যায় এবং আবার পাথর হতে পারে।
            * অপারেশনঃ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ল্যাপারোস্কপির মাধ্যমে এর চিকিৎসা সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। কারণ এ পদ্ধতিতে পুরো পিত্তথলি পাথরসহ অপসারণ করা সম্ভব। রোগী এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পুরা সুস্থ হয়ে ওঠে। পিত্তথলির পাথরের জন্য পেটে ব্যথা হলে এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে সার্জনের সঙ্গে দেখা করা উচিত। কারণ এ সময় ল্যাপারোস্কপির সাহায্যে এর চিকিৎসা করা সম্ভব।
           * পিত্তনালির পাথর সাধারণত পিত্তথলি থেকে আসে এবং পাথর পিত্তনালিতে এলে এগুলো খুব বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে, যেমন কাঁপিয়ে জ্বর আসা। জন্ডিস ও প্যানক্রিয়াটাইটিস পিত্তনালির পাথরও অপারেশন ছাড়া এর মাধ্যমে অপসারণ করা সম্ভব।
        **** হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে লক্ষণ অনুসারে ঔষধ প্রয়োগে পিত্তপাথর নিষ্কাশন করা যায়।

.
  পিত্তপাথর না হওয়ার জন্য কী সাবধানতা অবলম্বন করবেন?
-----------------------------------------------------------------------------------------------
          * উচ্চতা অনুযায়ী শরীরের ওজন সঠিক রাখতে হবে। ওজন বেশি হলে পিত্তপাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
       
* খাবারের তালিকায় কোলেস্টেরল-জাতীয় খাবার যেমন-মগজ, চিংড়ি মাছ, চর্বি, ঘিজাতীয় খাবার না রাখাই ভালো। তবে এসব খাবার খেতে সম্পূর্ণ নিষেধ নেই, মাঝেমধ্যে খাওয়া যাবে।
       
 * সারা দিনে যে খাবার খাবেন তাকে ভাগ করে চার থেকে ছয়বারে সেটা খাওয়া, বেশিবার খেতে বলার মানে বেশি খাওয়া নয়। কিন্তু বেশিবার খেলে পিত্তথলি বেশিবার সংকুচিত এবং প্রসারিত হবে। ফলে হয়তো পাথর হওয়ার প্রবণতা কমতে পারে।
       
 * আঁশযুক্ত খাবার খাবেন, যেমন- শাকসবজি ও ফল। এসব খাবার খেলে পাথর হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। ল্যাপারোস্কপি ও ওপেন অপারেশনের মধ্যে পার্থক্য ল্যাপারোস্কপির অর্থ হচ্ছে পেটের মধ্যে ক্যামেরা দিয়ে দেখা। ল্যাপারোস্কপি ও ওপেন অপারেশনের উদ্দেশ্য একই অর্থাৎ দুই অপারেশনেই সম্পূর্ণ পিত্তথলি পাথরসহ অপসারণ করা হয়। ল্যাপারোস্কপিতে ছোট ছোট ছিদ্র করে লম্বা সরু যন্ত্র দিয়ে কাজ করা হয়। ফলে অপারেশনের পর ব্যথা-বেদনা কম হয়। ওপেন অপারেশনে পেটকে বড় করে কাটা হয়। এতে অপারেশনের পর ব্যথা-বেদনা বেশি হয়, পেটে বড় দাগ থাকে। ল্যাপারোস্কপির পর পাথর থেকে যায়, এ কথা ঠিক নয়। কারণ এখানে পুরো পিত্তথলিকে বের করা হয়, যেমনটি ওপেন অপারেশনে করা হয়। পাথর থাকলে সেটা পিত্তনালিতে থেকে যেতে পারে, যেটা কিনা ওপেন অপারেশনের ক্ষেত্রেও হতে পারে। পিত্তনালির পাথরের চিকিৎসা ভিন্নভাবে করা হয়। ইআরসিপি-এর মাধ্যমে পিত্তনালির পাথর বের করা সম্ভব। ইআরসিপি-তে সম্ভব না হলে অপারেশন করতে হয়। অবশ্য বেশির ভাগ পিত্তনালির পাথর এখন ইআরসিপি-এর মাধ্যমেই অপসারণ করা যাচ্ছে।



.
          রোগীর জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শঃ
       -----------------------------------------------------
 পেটে ব্যথা হলে এবং পিত্তথলির পাথর নির্ণয় হলে এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে চিকিৎসা করিয়ে নেবেন, দেরি হলে চিকিৎসাজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হয়। পিত্তথলির অপারেশন শুধু অভিজ্ঞ সার্জন দিয়ে করাবেন, অনভিজ্ঞ সার্জন দিয়ে অপারেশন করালে অপারেশনজনিত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে। অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করলে পিত্তপাথর গলে না। তাই কোনো ধরনের ওষুধ খেয়ে সময় নষ্ট না করাই ভালো।

পুনশ্চ :- 
আপনার বন্ধু, কাছের মানুষ কিংবা স্বজনদের উপকারার্থে শেয়ার করতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.